রক্তমূখী নীলা

বৃষ্টি ও বিরহ (আগষ্ট ২০২১)

A R Shipon
  • 0
  • ৫৭
খুব শখ জেগেছে খালি পায়ে বৃষ্টিতে হাটবো। তবে ছাদে নয়। ঢাকার খোলা রাস্তায় অথবা পার্কে। খুব অদ্ভুত তাই না?
আমার সখ গুলো সত্যিই এমনই অদ্ভুত, ঠিক যেমন আমি। যাই হোক যেই কথা সেই কাজ। রুম থেকে খালি পায়েই বের হলাম। উদ্দ্যেশ্য ধানমন্ডি লেক, এখানে গেলে কাচা কাদামাটি পাওয়া যাবে। বৃষ্টিতে কাদামাটিতে হাটবো
পরনে একটা কালো টিশার্ট আর জিন্স প্যান্ট। হাতে এময়াই ত্রি ব্যান্ড। চোখে সানগ্লাস পরতে চেয়েছিলাম কিন্তু সেটা হয়নি আসিফের জন্য। আসিফ সম্পর্কে আমার ভাগিনা। অতিরিক্ত মাত্রায় ভদ্র এবং ভালো ছেলে। যে সানগ্লাসটি নরমালি আমি পরি সেটি আসিফের। আজ সে স্বর্নার সাথে দেখা করতে গিয়েছে, সানগ্লাসট নিয়ে গিয়েছে। আসিফ আর স্বর্নার সম্পর্কের ঘটনা আরেক গল্প। সেটা না হয় আরেকদিন বলবো। কারন এর মাঝে আছে আমার আরেক প্রিয় এবং গুল্টুস ভাগিনা হাবিব।
বৃষ্টিভেজা পথে হেটে হেটে ৩২ দিয়ে লেকের ভিতরে ঢুকলাম। ব্রিজে উঠে প্রথমেই একটা খুপড়ি টং দোকানে গিয়ে সিগারেট নিয়ে নিলাম। সিগারেটের সাথে পানও বিক্রি করছে। মিরাজ সাথে থাকলে নিশ্চিত পান নিতো। আমার ও ইচ্ছে করছিলো একটা পান নেই। ঠিক এইখানে এর আগে পান নিয়ে ছোট একটা গল্প আছে। বলি,
একদিন হটাৎ নজরুলের ফোন। বিকেল ৫টায় রবিন্দ্র সরবরে চলে আসতে হবে। কারন জানতে চাইলে বলে অনেকদিন দেখা হয় না স্রেফ তাই। অফিস শেষ করে ৬টায় চলে আসি। এসে দেখি মাশাল্লাহ সবাই হাজির। গল্প গুজব, নিকোটিন প্রনয়, গরুর চাপ আর লুচি পর্ব শেষ করে ৩২ এর দিকে রওনা দেই। সরবরের ব্রিজে উঠতে হটাৎ জুয়েলের চোখ পরে এক অসম্ভব সুন্দরী নাড়ীর উপর। জুয়েল আরিফকে ডেকে দেখায়। এরপর সবাই হা করে তাকিয়ে দেখি কিছুক্ষণ মেয়েটাকে। নীল শাড়ী পড়া, কপালে কালো টিপ। কিছুক্ষণ পর মেয়েটি উধাও হয়ে যায়। আমরা ব্রিজে কিছুক্ষণ কথা বার্তা বলে রাজা আর জুয়েলকে বিদায় দেই, ওরা বাইক নিয়ে ঐপাড়ে আসবে। বাইক থাকলে এই একটা ঝামেলা।
লেক দিয়ে গল্প তামাশা করে হাটতে হাটতে চলে আসি ৩২এ এই ব্রিজের কাছে। আমি একটা সিগারেট নেই। ঠিক তখন পেছন সালাউদ্দিন বলে দেখ দোস্ত ঐ মেয়েটা। আমি খেয়াল করলাম মেয়েটা ঠিক ঐ পান সিগারেটের দোকানের পাশেই বসে আছে। দেখতে দেখতে পেছন থেকে বাকি সবাই হাজির। পান সিগারেট কেনার ধুম পরে গেলো। মেয়েটিও বুঝতে পেরেছিলো আমরা তাকে ফলো করছি এবং তাকে নিয়েই কথা বার্তা বলছি। তাই মুহুর্তেই তার মুড বা ভাবটা জেনো একটু বেড়ে গেলো। পান খাচ্ছি, শেষ হচ্ছে আবার নিচ্ছি। প্রায় ২৫/৩০ মিনিট ঠিক এক জায়গায় আমরা দাঁড়িয়ে আছি। একসময় দোকানদারও বিরক্ত হয়ে সেখান থেকে চলে যেতো বললো। অপমান। যাক আমরা চলে যাচ্ছি আর বার বার পেছন ফিরে মেয়েটার দিকে তাকাচ্ছি।
আরিফঃ দোস্ত মেয়ে আমাকে চোখ মারছে।
মিরাজঃ শালা তোরে মারে নাই। আমাকে মারছে। ঐ দেখ আবার ডাকছেও।
মিরাজ আগাতে যাবে তখন আরিফ হাত দিয়ে আটকে দেয়। বলে আমাকে ডাকছে। সত্যিই আরিফ কে ডাকছিলো। আরিফ আমাকে সাথে নিয়ে গেলো। কারন আমি গেলো কোন সমস্যা নাই, এখানে সবচেয়ে অসুন্দর ছেলে আমি। তাই নিয়েও গেলেও রিস্ক ফ্রি।
আরিফঃ ডাকছিলেন?
মেয়েটিঃ এমন ভাব নিচ্ছেন যে আমি এমনি এমনিই আপনাকে ডেকেছি। এতোখন আপনারা আমাকে ফলো করেছেন সেটা দেখেছি। এরমধ্যে আপনি ছাড়া আমার সাথে অন্য গুলায় যায় না। আর এই ছোকড়াটাকে সাথে নিয়ে এলেন কেন? ভয় পান?
আমি অপমানিত বোধ করলাম এবং লজ্জিত। চুপ করে শুনে যাচ্ছি কথা।
আরিফঃ আপনার নাম্বারটি দেওয়া যাবে?
মেয়েটিঃ কেনো নয়? এই নিন আমার কার্ড। এখানে আমার নাম্বার, ফেসবুক আইডি, ইমো, ইন্সট্রাগ্রাম সব আছে। নরমালি আমি বড় বড় ব্যবসায়ী ছাড়া অন্য কারো সাথে যাই না। আর হ্যা, এক রাত ১০০০০। বাইরে কোথাও গেলে ৩ দিনে ৫০০০০। এখন যাই।
মেয়েটি চলে গেলো। আমি আর আরিফ স্তব্ধ হয়ে গেলাম মেয়েটির কথা শুনে। বাকিদের কাছে যখন এসে এই কথা বলি তখন সবাই হাসতে হাসতে শেষ। আরিফ কার্ড থেকে মেয়েটির ফেসবুক পেজ বের করে পিক দেখতে থাকলো। মডেল সে। কার্ডটি আরিফ ফেলে দিবে তখন তার কাছ থেকে কার্ডটি নিয়ে আমি ইউসুফ কে দিলাম। ওর কাজে লাগবে, কিছুদিন পর ও ম্বারাত্বক একটা ছ্যাকা খাবে। তখন এটা ওর কাজে লাগতে পারে।
আনমনে মুচকি হাসতে হাসতে আমি লেকের ব্রিজ পেরিয়ে ডিংগির কাছাকাছি চলে এসেছি। হাতের সিগারেট টাও শেষ। ইট থেকে নেমে মাটিতে জমে থাকা পানিতে পা ভিজাচ্ছি। ছোট বেলায় এমন জমে থাকা পানিতে অনেক খেলেছি।
হটাত পেছন থেকে একটা মেয়ে এসে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। আমি পরে যায়নি, তবে কিছুটা সরে গিয়েছি। পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখি লাল থ্রিপিস পড়া একটি মেয়ে, চোখে কাজল আর হাতে লাল চুড়ি। খোপায় ফুল আছে।
আমিঃ ধাক্কা দিলেন কেনো?
মেয়েটিঃ ধাক্কা দিবো না? বাচ্চাদের মত পানি নিয়ে খেলছেন কেনো?
আমিঃ আমার ইচ্ছে। আর আমি তো কারো ক্ষতি করছি না।
মেয়েটিঃ সেটাও ঠিক। আচ্ছা যে কারনে আপনার কাছে আসা।
আমিঃ কি কারন?
মেয়েটিঃ অনেকখন ধরে দেখলাম আপনি খালে পায়ে হাটছেন। নিশ্চয় জুতো ছিড়ে গেছে, মুচি খুজে পান নাই আর তাই জুতোটি ফেলে খালি পায়ে হাটছেন। আশেপাশে মন হয়না কোন জুতোর দোকান আছে। তাই আমি আপনার জন্য জুতো নিয়ে এসেছি। দাম মাত্র ৫০০ টাকা।
আমিঃ এই জুতোর দাম ৫০০ টাকা নাকি? আর আমি এতোদামি জুতো কিনি না। কাওরান বাজার থেকে ২০০ টাকায় এর চেয়ে ভালো জুতো পাবো।
মেয়েটিঃ প্লিজ ভাইয়া নিন। কম দেওয়া যাবে না। দেওয়া গেলে দিতাম।
আমিঃ নিতে পারি। যদি আপনি সত্যি করে বলেন এই জুতোটি কিভাবে আপনি পেয়েছেন। আর আপনার নাম।
মেয়েটিঃ আমি তৃষা, অদ্রীতা তৃমিস্রা তৃষা। ফেসবুকে সার্চ দিলেই আমাকে পাবেন। আমি খুব ভালো গল্প লিখি। আমার অনেক ফ্যান।
আমিঃ আমি জানতে চেয়ে আপনার জুতোর কাহিনি।
তৃষাঃ আসলে আমি বাসা থেকে পালিয়ে এসেছিলাম। ফেসবুকে একটা ছেলের সাথে পরিচয়। খুব ভালো কবিতা লিখতো। প্রেমে পরে যাই। তাই তাকে না দেখেই পালিয়ে বিয়ে করার স্বিদ্ধান্ত নেই। পালানোর মধ্যে অন্যরকম একটা ফিলিঙংস আছে । তাই না?
আমিঃ আমি কখনো কাউকে নিয়ে পালায়নি।
তৃষাঃ পালিয়ে যাবেন, দেখবেন সেই রোমাঞ্চকর। তবে আগে দেখে নিবেন তাকে।
আমিঃ ঘটনা বলুন।
তৃষাঃ আমি যশোর থেকে এসেছি। ছেলেটির নাম অরিক। এখানে এসে দেখি ছেলেটা বেশি সুন্দর । হ্যা ফর্সা, কিন্তু আমার ভালো লাগে নাই। সরাসরি নাও করতে পারিনি। ছেলেটি আমার জন্য পাগল। লেকের ধারে এসে বলি লেকের মাঝ খান থেকে আমাকে একটা পদ্মফুল এনে দিতে হবে। পানিতে নামলেই আমি জুতো নিয়ে আসি। আগে অনেকবার পিক চাইছি দেয় নাই। তাই এই শাস্তি।
আমিঃ হাহাহহাহাহাহাহাহাহা। দারুন শ্বাস্তি। তো জুতো ফেলে দিন এখন, হকারের মত জুতো বিক্রি করছেন কেনো?
তৃষাঃ আসলে ভূলে আমি আমার ব্যাগটি ঐখানে ফেলে রেখে এসেছি। এখন যশোর ফিরে যাওয়ার মত টাকা নাই।
আমিঃ আচ্ছা বুঝছি। এই ধরুন ৫০০ টাকা। আর সে কোথায় আছে? জুতোটি দিন আমি তাকে ফেরত দিয়ে আসি।
তৃষাঃ আপনার জুতো লাগবে না? খালে পায়ে হাটছেন তো।
আমিঃ আমি ইচ্ছে করেই খালি পায়ে হাটছি। শখ জেগেছে খালি পায়ে হাটার।
তৃষাঃ বাহ! আপনিও তো আমার মত পাগল।
আমিঃ আমি পাগল ঠিক আছে, তবে আপনি পাগল না, পাগলী। এখন শুনুন। আপনি আমাকে দূর থেকে দেখিয়ে দিবেন আর আমি তাকে জুতো ফিরিয়ে দিয়ে আসবো। আর বলবো দয়া করে তার সাথে আর যোগাযোগ করবেন না।
তৃষাঃ ধন্যবাদ।
এরপর আমি গিয়ে ছেলেটিকে জুতোটি ফিরিয়ে দিয়ে আসি। ছেলেটি দেখতে ভালোই, ফর্সা, লাম্বা, সব দিক থেকেই ভালো। কিন্তু কেনো অদ্রীতা তৃমিস্রা তৃষা নামের মেয়েটি ছেলেটিকে পছন্দ করলো না বুঝলাম না। হয়তো পরে ভূল বুঝতে পেরেছে যে বাবা মা কে কষ্ট দেওয়া ঠিক হবে না।
অদ্রীতা তৃমিস্রা তৃষাকে আমি কল্যানপুর গিয়ে বাসে উঠিয়ে দিয়ে আসি। সে আমার কাছ থেকে আমার মোবাইল নাম্বার নেয়। পরে বিকাশ করে টাকা ফেরত দিবে বলে। আমি খুব বড়লোক না যে টাকার মায়া ছেড়ে দিবো। নাম্বার দিলাম। এরপর বাসায় ফিরে আসি।
দুই দিন পর সেই তৃষার ফোন। ফোনে মেয়েটির কন্ঠ অসম্ভব সুন্দর। প্রেমে পরে যাবার মত।
তৃষাঃ ভালো আছেন?
আমিঃ জ্বি, ভালো। কে আপনি? (ট্রুকলারের মাধ্যমে আগেই জেনেছি ফোনদাতার নাম অদ্রীতা তৃমিস্রা তৃষা, তবুও না চেনার ভান করলাম)
তৃষাঃ জুতোচোর।
আমিঃ জুতোচোর মানে? দেখেন আমি জুতোচোর চক্রের সদস্য না। আপনি ভূল নম্বরে কল করেছেন।
এই বলে কেটে দেই আমি ফোন।
পরমুহুর্তে আবার ফোন
আমিঃ জ্বি জুতোচোর বলুন।
তৃষাঃ আপনি ফোন কাটলেন কেনো?
আমিঃ জুতোচোরের সাথে বেশি কথা বলি না।
তৃষাঃ আমি প্রফেশনাল চোর না।
আমিঃ পার্টটাইম?
তৃষাঃঃ উউফ। আমি তৃষা, অদ্রীতা তৃমিস্রা তৃষা। সেদিন ধানমন্ডি লেকে............... চিনেছেন?
আমিঃ যখন কল দিয়েছেন তখনই। আমার ফোনে ট্রুকলার ইনস্টল করা।
তৃষাঃ তাহলে এমন করলেন কেনো?
আমিঃ বাদ দিন। টাকা দেবার জন্য ফোন দিয়েছেন তো, আমার এই নাম্বারেই বিকাশ করা আছে। টাকা পাঠিয়ে দিয়েন।
আবার ফোন কেটে দেই। সে আবার ফোন দেয়। ফোন রিসিভ করি। ওপাশ থেকে আ উ এর শব্দ।
তৃষাঃ আমি টাকা ফেরত দেবার জন্য ফোন দেইনি। টাকা নিতে চাইলে যশোর এসে নিয়ে যাবেন।
আমিঃ যাহ! বাবা সাহায্য করেও বিপদে পরে গেলুম। আচ্ছা টাকা দিবেন না তো ফোন দিয়েছেন কেনো?
তৃষাঃ আপনার সাথে কথা বলতে।
সেদিন প্রায় ১০১ মিনিট কথা বলি ফোনে। এরপর থেকে প্রায় প্রতিদিন আমাদের কথা হয়। কিছুদিনের মধ্যে আমরা একে অপরের প্রেমে পরে যাই। সারাদিন একজন আরেকজনের সাথে বিভিন্নভাবে এটাচ থাকি। মানে যোগাযোগ আছেই যে কে কি করছে, খাচ্ছে। আমার কথা মত বিভিন্নভাবে সে সাজে। সেজে ছবি তুলে দেয়। একদিন সে নীল শাড়ি, নীল চুড়ি, চোখে কাজল আর কপালে লাল টিপ করে অসম্ভব সুন্দর একটা ছবি দিয়েছিলো। দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম। সেদিন তার নাম দেই আমি রক্তমুখী নীলা। রক্তমুখী নীলা বিশেষ একধনের মূল্যবান হীরার নাম। সচরাচর পাওয়া যায় না। উজ্জ্বল নীল রঙ্গের ভিতরে রক্ত লাল হিরার ছটা। দেখতে নাকি অনেক বেশি সুন্দর। শরবিন্দ বন্দোপাধ্যায়ের একটা গল্পও আছে এই নামে। সেখান থেকেই এতোকিছু জানা। আর তার সেই রক্তমুখী নীলার সৌন্দর্য আমি তৃষার মধ্যে খুজে পেয়েছি তাই তাকে এই নাম দেওয়া। সেও খুব পছন্দ করেছে। তবে একটা কথা।
রক্তমুখী নীলা পাথর সবার জন্য না। জৌতিসদের মতে এটি মানুষের ভাগ্যে বিশাল পরিবর্তন আনে। কারো জন্য ভালো, কারো জন্য মন্দ। গ্রহ, নক্ষত্্ কাল এবং রাশি মিললে তার জন্য রক্তমুখী নীলা শুভ আর না মিললে অশুভ। জানিনা তৃষা রক্তমুখী নীলা হয়ে আমার জন্য শুভ নাকি অশুভ।
রাতে ঘুমে স্বপ্নে দেখলাম কোন এক খোলা ছাদে। রক্তমুখী নীলা(তৃষা) নীল শাড়ী, লালটিপ, খোপায় বেলি ফুলের মালা পরে দাঁড়িয়ে আছে। রেগে আছে কোন কারনে। তবে রাগার কারনে ওকে দেখতে আরো বেশি সুন্দর লাগছে। গাল দুটো ফুলে আছে। ইচ্ছে করছে হাত দিয়ে টিপে দেই।
আমি কাছে গেলাম
তৃষাঃ কুত্তি
আমিঃ ছেলেরা কুত্তি হয় না, কুত্তা হয়।
তৃষাঃ শালার বাচ্চা শালা, ইতর, বদমাইশ, .........................অকথ্য ভাষায় কিছু গালিগালাজ........................ (যদিও আমি মুগ্ধ হয়ে শুনছিলাম)
আমিঃ আজিব! এইভাবে গালি দিচ্ছো কেন আমাকে?
তৃষাঃ শালার বাচ্চা শালা, ধানমন্ডি থেকে যশোর আসতে ১ ঘন্টা সময় লাগে? এই ছাদে এই একঘন্টা আমি একা একা দাড়ায় ছিলাম, আর এই যে বৃষ্টি এলো। আমার সব মেকাপ নষ্ট হয়ে গেলো।
আমিঃ আহালে বাবুটা। কান্দে না। তোমাকে আটা ময়দা ছাড়াই সুন্দর লাগে। (তৃষাকে টেনে নিজের বুকে শক্ত করে জরিয়ে ধরি)
ঘুম ভেংগে যায় আমার। সকালে উঠে তৃষাকে ফোন দেই। স্বপ্নের সব কথা খুলে বলি। তৃষা হাসে। এরপর
আমিঃ একটা অনুরোধ রাখবে রক্তমুখী নীলা?
তৃষাঃ বলেন মহাশয়।
আমিঃ তুমি স্বপ্নের মত করে আমাকে গালি দিবে, আমি শুনবো, শুনে মুগ্ধ হবো।
তৃষাঃ তুমি পাগল?
আমিঃ হ্যা আমি পাগল। আমার শখ জাগছে কোন মেয়ের মুখে অকথ্য ভাষায় গালি খাবো।
তৃষাঃ কোন মেয়ের মুখে অকথ্য ভাষায় গালি খাবা?
আমিঃ হুম।
তৃষাঃ ওয়েট।
তৃষার দৌড়ে একরুম থেকে অন্য রুমে যাওয়ার শব্দ শুনতে পাই আমি। সে বলেঃ মা এক ছেলে আমাকে কয়েকদিন ধরে ফোন দিয়ে খুব ডিস্টার্ব করছে। এই নাম ফোন ইচ্ছে মত গালি দিয়ে দাও। এরপর শুরু হয় তৃষার মায়ের অকথ্য ভাষায় গালাগালি। স্বপ্নের চেয়েও ভয়াবহ গালাগালি। শুনে তো আমার টাসকি খাওয়ার অবস্থা।
যাই হোক এরপর তৃষা তার মায়ের কাছ থেকে ফোন নিয়ে আমাকে ব্যাক করে জিজ্ঞেস করে কেমন লাগলো, আমি বললাম অসাধারণ। হাসতে হাসতে তো ও শেষ।
কয়েকদিন যাবত তৃষার ফোন বন্ধ। ফেসবুকে হাজারবার নক করেও কোন খোজ খবর নেই। খুব খারাপ লাগছিলো, অসহ্য মনে হচ্ছিলো পৃথিবীটা। নিজের উপর নিজের রাগ চরম মাত্রাইয় বেড়ে গিয়েছিলো যার ফলে বাচ্চাদের মত ব্লেড দিয়ে হাত কাটা শুরু করলাম। এতোদিন হয় সম্পর্কে অথচ ওর বাসার ঠিকানাটা নেওয়া হয় নাই আমার। কি বোকা আমি। ঠিক তখন আমার ফোন বেজে উঠে। তৃষার নাম্বার থেকে ফোন। ফোন ধরে কাদতে কাদতে ওকে ঝাড়ি দিতে থাকি। ও বলে
তৃষাঃ তুমি এই মুহুর্তে যশোর রওনা দাও। আমার বাবা মা তোমার সাথে কথা বলবে। অনেক কষ্টে সবকিছু ম্যানেজ করেছি। প্লিজ আমাকে ঠকিয়ো না। তুমি আসো, আমার বাবা মার সাথে কথা বলো। আমি তোমাকে ছাড়া বাচবো না। আমি ঠিকানা এসএমএস করে দিচ্ছি।
তৃষার ফোন রাখার পরপরই আমি ফ্রেশ হয়ে রওনা দেই যশোরের উদ্যেশে।
তৃষাদের আলিষান বাড়ি। শ্বশুরবাড়ি হিসেবে খারাপ হবে না। আমার মত ভেগাবন্ড আরামছে শ্বশুড়ের টাকায় চলতে পারবে।
দরজার কলিংবেল টিপলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে ধরজা খুলে দিলো। তৃষা নিজেই দরজা খুলে দিয়েছে। নীল শাড়ী, কালো ব্লাউজ, লাল টিপ, নীল চুড়ি, চোখে কাজল, খোপায় বেলিফুল। স্বপ্নের রক্তমূখী নীলার চেয়েও হাজার গুন বেশি সুন্দর লাগছে তৃষাকে আজ। তৃষা ভিতরে ঢুকতে বলে। ওর বাবা মার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। সালাম দেই। এরপর ওর বাবা মার সাথে কথা হয়। একা এক রুমে গিয়ে কথা বলে আমার সাথে। কি করি, কোথায় থাকি, বংশ পরিচয়, বাবা মা কি করে, সম্পতি কি রকম। মোটামুটি বড়ধরনের একটা ইন্টারভিউ দিলাম। এখন রেজাল্টের অপেক্ষায়। উকি দিয়ে তৃষাকে খুজছিলাম, কিন্তু পেলাম না। কিছুক্ষণ পর তৃষার বাবা এলেন। গম্ভীর মুখ।
তৃষার বাবাঃ শোন ছেলে। তৃষা আমার একমাত্র মেয়ে। কোন বাবাই তার আদরের মেয়েকে তোমার মত এরকম এক বেকার ছেলের কাছে বিয়ে দিবে না। আমিও তোমার কাছে বিয়ে দিতে চাচ্ছি না। আবার মেয়েকে তার পছন্দের ছেলে আমার অপছন্দ হয়েছে সেটা বলেও কষ্ট দিতে চাচ্ছি না। অরিক নামের একটা ছেলে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে, বুয়েট পাশ করা, কবিতা লিখতে জানে, দেখতেও মাশাল্লাহ। তৃষা রাজি না। আমি তৃষার উপর কখনো জোর করবো না। এখন তুমি জানো তুমি কি করবে। তোমার সাথে ঘটা করে আমার পক্ষে আমার মেয়ের বিয়ে দেওয়া সম্ভব না। সম্মানে বাধে। ও ছাদে আছে, তুমি ওকে নিয়ে পালিয়ে যাও। ও সব ভাবে রেডি আছে, ওর মা ওর ব্যাগ গুছিয়ে দিয়ে এসেছে।
আমিঃ আচ্ছা, আমি তাহলে ছাদে যাই।
তৃষার বাবাঃ আচ্ছা যাও।
আমি ছাদে গেলাম। তৃষা দৌড়ে এসে আমাকে জরিয়ে ধরলো।
তৃষাঃ শুনো বাবার কথায় কিছু মনে করো না। যাক যেভাবেই হোক বিয়েতে সে রাজি হয়েছে। এখানে এভাবে মেনে নিচ্ছে না। কিন্তু কিছুদিন পর ঠিক মেনে নিবে। এই নাও ব্যাগ। চলো যাই।
আমিঃ কোথায় যাবো?
তৃষাঃ তুমি যেখানে নিয়ে যাবে।
আমিঃ তুমি আমাকে মিথ্যে বলেছো।
তৃষাঃ কিহ! কি বলেছি।
আমিঃ তুমি জানো আমি রাজনিতি করি। আর আমি আমার বিরোধী দলকে খুব বেশি অপছন্দ করি সেটাও তুমি জানো। তোমার বাবা সেই বিরোধী দলের একজন সনামধন্য নেতা। সেটা কেনো তুমি আমাকে বলোনি? একটা চরম পর্যায়ের ধোকাবাজ তুমি। তোমার সাথে আর যাই হোক সংসার হয় না। সেটা জানো তুমি?
তৃষাঃ কি বলছো তুমি? আমার বাবা করে, আমি না।
আমিঃ যেমন বাবা তার তেমন মেয়ে। এইখানে আমি আর এক মুহুর্তও থাকবো না। চলে যাচ্ছি।
তৃষাঃ দাড়াও। ( তৃষার কাদছে, তার চোখ দিয়ে অঝড়ে জ্বল বেরিয়েই চলছে, হাত-পা কাপছে। যেনো রক্তমূখী নীলা থেকে রক্ত ঝরছে)
তৃষা তার ব্যাগ থেকে ৫৭৫ টাকা বের করে আমার দিকে এগিয়ে দেয়। আমি হাত দিয়ে টাকাটা নিয়ে নেই।
তৃষাঃ যেদিন তোমার আমার প্রথম দেখা হয়েছিলো সেদিন তুমি আমার জন্য ৫৭৫ টাকা খরচ করেছিলে। আমি বলেছিলাম দিয়ে দিবো।
আমিঃ ধন্যবাদ।
আমি পেছন ফিরে হাটা শুরু করি। হটাত করেই বৃষ্টি শুরু হয়। তৃষা হাটু গেড়ে বসে পরে চিতাকর করে কান্না শুরু করে। ওর কান্না দেখে আমার ইচ্ছে করছিলো কাছে গিয়ে জরিয়ে ধরে আমিও কাদি। কিন্তু ততখনে বুঝে গিয়েছি, জেনে গিয়েছি নিজের সম্পর্কে। কতটাই না অযোগ্য, অকর্ম আমি।

বিষন্ন শুন্যতায় জীবনাযাপন আমার। অন্ধকার এখন আমার সবচেয়ে প্রিয়। যথা সম্ভব অলস সময় পার করার চেষ্টা করি। কিন্ত বেচে থাকার তাগিদে কিছুনা কিছু তো করতেই হয়। কিছুদিন একটা ছোট প্রাইভেট কোম্পানীতে এইচ আর ডিপার্টমেন্টে চাকরি করেছি। নিজের মধ্যে কিছু আছে কিনা সেটা যাচাই করার জন্য কিন্তু না, কিছুই নেই আমার মধ্যে রক্তমূখী নীলার (অদ্রীতা তৃমিস্রা তৃষা) বাবার ভাষ্যই সত্য। আমি অযোগ্য, অকর্ম। এমনকি একটা কবিতাও লিখতে পারি না। যাক সে কথা, খেয়ে পরে বেচে থাকতে তো হবে। তেমন কিছুই জানিনা, আবার একদম নিচু শ্রেনীরও না যে কামলা খেটে পেট চালাবো। থ্রিডি মডেলিং টুকটাক শিখেছিলাম। সেটা নিয়েই অনলাইন ফ্রিল্যান্সিং শুরু করেছিলাম। ঐটা করেই এখন কোন রকম দিন কেটে যাচ্ছে। চাকরি বাকরির ক্ষ্যাতা পুরে দিয়েছি।
আমার কাছে রক্তমূখী নীলার একটা ছবি ছিলো। ঐ যে ঐটা, নীল শাড়ী পড়া যে একটা ছবি দিয়েছিলো সেটা। প্রতিদিন সকাল ঘুম থেকে উঠে তার ছবি সব কাজের আগে দেখা এখন আমার দৈনিন্দন রূটিন হয়ে দাড়িয়েছে। মাঝে মাঝে রাতে ঘুমানোর আগেও দেখি। আজ তেমন কাজ নেই। একমগ কফি রেডি করে বারান্দায় বসে মোবাইলে রক্তমূখী নীলার ছবিটা বের করলাম। অপলক দৃষ্টিতে দেখছি। যতদেখছি তত মনে হচ্ছে চোখের জ্যোতি বের যাচ্ছে। রক্তমূখী নীলার এই ছবিটা আমার চোখের নিরাময়ক হিসেবে অনেকটা কাজ করে। হুট করে মনে হলো আচ্ছা ও কি আমাকে ফেসবুক থেকে আনব্লক করেছে? ওদের বাসা থেকে ফিরে এসে দেখি ও ফেসবুকে আমার ব্লক করে দিয়েছে।
ফেসবুকে ঢুকে অদ্রীতা তৃমিস্রা তৃষা লিখে সার্চ দিলাম। নাহ এই নামে তো কোন আইডি সো করছে না। তারমানে তৃষা আমাকে এখনো ব্লক লিষ্টে রেখেছে। মনটা ভিষন খারাপ হয়ে গেলো। সাথে সাথে নতুন একটা ফেসবুক আইডি খুললাম। সে আইডি দিয়ে অদ্রীতা তৃমিস্রা তৃষা লিখে সার্চ দিলাম। এবার ও কিছু পেলাম না। বাংলা ইংলিশ দুইভাবেই সার্চ দিলাম কিছু পেলাম না। মোটামুটি শিউর হলাম যে এই নামে সে আইডি চালায় না। আমি আমার আগের আইডিতে ঢুকে ম্যাসেজের একদম পেছনে চলে গেলাম। খুজতেছিলাম অদ্রীতা তৃমিস্রা তৃষা এর পুরোনো আইডি। হাহাহাহাহা। শিউড় সে আইডিটা ডিলেট করে দিয়েছে। হয়তো নতুন নামে কোন আইডি চালাচ্ছে। মাঝে মাঝে আমার আইডি তে ঢুকে হয়তো দেখে আমি কি নতুন কোন পোষ্ট দিলাম কিনা। আমার সর্বশেষ পোষ্ট ছিলো
Oক্ষমাকরো প্রিয়তমা,
অক্ষমতার জ্বালায় জ্বলে
তিলে তিলে হবো একদিন শেষ
জানবে যেদিন বেসেছি কত ভালো
থাকবে তাকিয়ে জানি অনিমেষ।

অভিশাপ দাও অভিশাপ দিও
প্রার্থনা তবু রইলো মোর
পৃথিবীর যত সুখ আছে সব
আনুক তোমায় নতুন ভোর।
এটাই ছিলো আমার লেখা প্রথম এবং শেষ একমাত্র কবিতা। অরিকের মত কবিতা লেখার বৃথা চেষ্টা যাকে বলে। অরিক! আচ্ছা অরিকের সাথে তো তৃষার বিয়ে হবার কথা ছিলো। অরিকের আইডীতে ঢুকি। Orik Subhan লিখে সার্চ দিতেই অরিকের আইডি খুজে পাই। স্ক্রল করতে করতে নিচে এসে দেখি অরিক আর তৃষার ছবি। গায়ে হলুদের ছবি। আরো স্ক্রল করে নিচে নামি। কিন্তু বিয়ের দিনের কোন ছবি পাই না। মন টা আরো খারাপ হয়ে যায়। অরিককে ব্লক করে দিয়ে এসে সুয়ে পরি।
ফুল দিয়ে সাজানো একটা দামি গাড়ীর মধ্যে শেরওয়ানী, পাঞ্জাবী পাগড়ী পড়া আমি। পাশে লাল বেনারশী শাড়ী আর শরীরে এত্তো এত্তো গয়নায় মোড়ানো তৃষা বধু সাজে। খুব আনন্দ বা অন্যরকম একটা সুখ অনুভব করছিলাম। লাজুক ভাবে মাথা নিচু করে তৃষার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে ছিলাম। গাড়ীটি লাল নীল ঝাড়বাতি দিয়ে সাজানো এক ছোট্ট বাড়ীর সামনে দাঁড়ালো। একজন এসে গাড়ীর দরজা খুলে দিলো, আমি নেমে আসলাম। এরপর তৃষাকে হাত ধরে গাড়ী থেকে নামালাম। এক পিচ্চি মেইয়ে বলে উঠলো
জামাই বউকে কোলে করে নিয়ে যাবে উপরে। সাথে সাথে বাকি সবাই পিচ্চির কথায় সায় দিলো। কি বিপদ। কি লজ্জা। এতো গুলো মানুষের সামনে এখন ওকে কোলে নিতে হবে?
আমি তৃষার দিকে তাকালাম। তৃষা মুচকি হাসলো, মানে তার সম্মতি আছে। যাক লজ্জা দূরে ঠেলে তৃষাকে কোল তুলে নিলাম। তৃষা আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। হাটা শুরু করলাম। তৃষা দেখতে চিকন চাকন হলেও ওর কিন্তু ওজন ১০০ কেজির নিচে হবে না। কোলে নিয়ে তাই মনে হচ্ছে।
এই মুহুর্তটা সত্যি অসাধারণ। ওর স্পর্শ আর শরীরের সুঘ্রাণ আমাকে মুগ্ধ করে তুললো। এতো ওজন থাকা স্বত্তেও আমার ইচ্ছে হচ্ছিলো না ওকে কোল থেকে নামাই। কিন্তু। যাক নামাতে তো হবে, নামাতে গেলাম আর তখন হাত ফসকে পরে গেলো।
ধুর স্বপ্নটাই ভেঙ্গে গেলো। স্বপ্নটা এতই মধুর ছিলো যে ঘোর কাটাতে ইরামে যেতে হয়। সারাদিন সেদিন খালি পায়ে ঘোড়াঘোড়ি করে কাটিয়ে সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে রক্তমূখী নীলার ছবি বের করে দেখতে থাকি। হুট করে মাথায় একটা বুদ্ধি আসলো। এতো ক্যারেক্টার করি কিন্তু এখনো রক্তমূখী নীলার একটা ক্যারেক্টার করা হলো না। আজই শুরু করবো।
সেই রাতেই মডেল দার করানো শুরু করি। তিনদিন পর প্রিয়তমা রক্তমূখী নীলার অসম্ভব সুন্দর একটি ত্রিডি মডেল তৈরি হয়ে যায়। এখন ইচ্ছে করছে পিসি থেকে বের করে এনে বুকের মধ্যে আগলে রাখি। কিন্তু কিভাবে সম্ভব ?
সম্ভব। মুহুর্তেই মনে পরে গেলো নাজমুল ভাই এর কথা। ফোন দিয়ে কনফার্ম করলাম। আগামীকাল তার বাসায় গিয়ে মডেলটি ত্রিডি প্রিন্ট দিয়ে নিয়ে আসবো।
নাজমুল ভাই এর বাসা থেকে ফিরতে ফিরতে রাত ১২টার বেশি বেজে যায়। রুমে ঢুকে কোনরকম ফ্রেস হয়ে প্রিন্ট করা রক্তমুখী নীলা কে নিয়ে বসি। অপলক দৃষ্টি তে চেইয়ে থাকি। টানা কয়েকদিন দিনরাত জেগে ঘুমে মাতাল হয়ে গিয়েছিলাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই রক্তমূখী নীলাকে বুকের জরিয়ে ধরে ঘুমিয়ে পরি।
অল্পশব্দেই আমার ঘুম ভেঙ্গে যায় সেই ছোট থেকেই। চুড়ির সাথে চুড়ির শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায়। চোখ খুলেই চিৎকার করে উঠি। আমার বুকের উপর নিষ্পাপ শিশুর মত ঘুমিয়ে আছে নীলা।
আমার চিৎকারে ওর ও ঘুম ভেঙ্গে যায়। উঠে ঠিক আমার উপরেই বসে চোখ কচলাতে থাকে। তারপর একচোখ খুলে আমার দিকে তাকিয়ে
রক্তমূখী নীলাঃ কেমন আছো?
আমিঃ ভালো আছি। তুমি এখানে কিভাবে?
রক্তমূখী নীলাঃ কিভাবে এসেছি সেটা জিজ্ঞেস করলে কিন্তু কেমন আছি সেটা জিজ্ঞাস করার প্রয়োজন মনে করলে না।
আমিঃ কেমন আছো?
রক্তমূখী নীলাঃ ভালোবাসার মানুষটিকে ছাড়া একা একটি মেয়ে কিভাবে ভালো থাকতে পারে? আর তুমিই আমাকে এখানে নিয়ে এসেছো, কিভাবে সেটা আমি জানিনা।
আমিঃ তোমার না বিয়ে হয়েছে অরিকের সাথে? কেমন চলছে সংসার?
রক্তমূখী নীলাঃ খুদা লাগছে খুব। শুনো বাইরে থেকে নেহারী আর রুটি নিয়ে আসবে। আর দুপুরের বাজার করে নিয়ে আসবে। আমি রান্না করবো।
আমি শান্তশিষ্ট ভদ্র ছেলের মত বাইরে চলে আসি। মাথা ঘুরপাক খাচ্ছে। যাই হোক পাচফোরন রেস্তুরা থেকে নাস্তা আর অল্প কিছু বাজার করে নিয়ে আবার বাসায় ফিরি। কলিংবেল চাপতেই দরজা খুলে দেয় আসিফ।
আসিফঃ মামা মামিকে নিয়ে আসলেন কবে ?
আমি এতোখন পর্যন্ত নিজেকে স্বান্তনা দিচ্ছিলাম যে এটা নিশ্চয় আমার হ্যালুসিনিয়েশন, কিন্তু আসিফ দেখলো কিভাবে?
আমিঃ এই আরকি।
আসিফঃ চলেন ভিতরে চলেন।
ভিতরে গিয়ে দেখি তৃষা হাবিব এর সাথে গল্প করছে। আমাকে দেখে উঠে এসে আমার হাত থেকে সব নিয়ে গোছাতে থাকে। এরপর আমার আনা নাস্তা ভাগ করতে থাকে প্লেটে। আমি দুজনের জন্য এনেছিলাম। কিন্তু আমরা তো এখন চারজন।
দুই রুম, একটি বারান্দা, দুটি টয়লেট এর এই ছোট্ট ফ্ল্যাটে আমি, আসিফ, হাবিব থাকি। আমি একা এক রুমে আর দুই ভাগিনা আসিফ ও হাবিব একরুমে।
হাবিবঃ মামা আজ থেকে তাহলে আমাদের রান্না বান্না করার কষ্ট শেষ, এখন থেকে মামি রান্না করবে।
রক্তমূখী নীলাঃ আচ্ছা বাবা, ঠিক আছে। এখন থেকে এখানের সব দ্বায়িত্ব আমার। খুশি?
আসিফ আর হাবিব স্বমস্বরে চেচিয়ে বলে “মহাখুশি”, আজ বিরিয়ানী হবে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
ফয়জুল মহী অনবদ্য শব্দ চয়ন I শুভ কামনা নিরন্তর

১৬ সেপ্টেম্বর - ২০১৮ গল্প/কবিতা: ৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪